৩১৫ রান। বাংলাদেশ দলের সমসাময়িক পারফরম্যান্স অনুযায়ী কঠিন কোনো লক্ষ্যও ছিলো না। শুধু ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে না পারায় ম্যাচটি হারল বাংলাদেশ। এই সাথে শেষ হয়ে গেলো বিশ্বকাপে টাইগারদের সেমিফাইনালের স্বপ্নও।
সেমিফাইনালের রেসে টিকে থাকার ম্যাচে বাংলাদেশকে ২৮ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে ষষ্ঠ জয় পেলো ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ভারতের দেয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ (৬৬) রান করেন সাকিব আল হাসান। সাইফউদ্দিন করেন অপরাজিত (৫১) রান।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান সংগ্রহ করে ভারত। বড় পুঁজিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শার্মা সর্বোচ্চ (১০৪) রান করেন দলের হয়ে। (৭৭) রান আসে লোকেশ রাহুলের ব্যাট থেকে।
‘কালোবাজারি’ থেকেও টিকেট সংগ্রহ করতে দ্বিধা করেনি দু’দেশের দর্শককূল। ৫০ পাউন্ডের টিকেট দুই শ’ পাউন্ড দিয়ে কিনে ২৫ হাজার ধারনক্ষমতা বিশিষ্ট এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একটি আসন পেয়ে মাশরাফি-কোহিলদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা দেখতে চেয়েছিলেন স্বচক্ষে গ্যালারীতে বসে। বাংলাদেশী দর্শকরা লাল-সবুজে রাঙিয়ে তোলে গ্যালরীর একাংশ। আরেকদিকে গেরুয়া-সাদা আর সবুজে ভাসে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা। সেমিফাইনালের রেসে টিকে থাকতে হলে উত্তেজনা ঠাসা ম্যাচে বাংলাদেশকে পরাজিত করতে হবে ভারতকে। এমন ধ্যান নিয়েই মাঠে নামেন মাশরাফি বাহিনী।
মঙ্গলবার বার্মিংহ্যামের এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-ভারত। বিশ্বকাপের ৪০তম ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কেহলি।
ব্যাটিং সহায়ক পিচে অধিনায়কের প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত ভালো চয়েজ ছিলো বলে জানান দিলেন দুই ওপেনার রোহিত শার্মা ও রোকেশ রাহুল। ২৯.২ ওভারে বাংলাদেশী বোলারদের বেদম পিটিয়ে দুই ওপেনার ১৮০ রানের বড় জুটি গড়ে ভারতকে রানের পাহাড়ে বসানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন শুরু থেকেই।
নিয়মিত বোলাররা যখন জুটি ভাঙতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা পার্ট টাইম মিডিয়াম পেসার বোলার সৌম্য সরকারকে বোলিং অ্যাটাকে নিয়ে আসেন। সৌম্য এসেই আস্থার প্রতিদান দিতে করেননি অধিনায়কের। ইনিংসের ৩০তম ওভার করতে এসে ওভারের দ্বিতীয় বলেই বিধ্বংসী রোহিত শার্মাকে তুলে নিয়ে ভারতীয় ওপেনিং জুটির ছেদন ঘটান সৌম্য এবং দলকে এনে দেন দারুণ এক ব্রেক থ্রো। আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশী বোলারদের হেসেখেলে পিটিয়ে রোহিত শার্মা তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৬তম সেঞ্চুরি। ৯২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংসে খেলেন রোহিত। ১৮০ রানে তার আউটের পর ১৯৫ রানের মাথায় লোকেশ রাহুলের উইকেটও হারায় ভারত। ৭৭ রানে ফিরিয়ে ভারতীয় শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন পেসার রুবেল হোসেন। ওয়ানডাউনে নেমে বিরাট কোহলিকে (২৬) ও হার্দিক পান্ডিয়াকে পর পর তুলে নিয়ে জোড়া আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। ওপেনাররা দুর্দাস্ত শুরু করলেও শেষদিকে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা এবং বাংলাদেশী বোলারদের কামব্যাকে দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে ভারত। চারে ব্যাট করা ঋষভ পান্তের ৪৮ ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ৩৫ রানের সুবাধে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান সংগ্রহ করে ভারত। আর তাতে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৫ রান।
বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ৫টি, রুবেল হোসেন, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকারি একটি করে উইকেট শিকার করেন।
৩১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না বাংলাদেশী দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ শামির নিচু লেন্থের বল ব্যাটের নিচের দিকে লেগে আঘাত হানে তামিমের স্টাম্পে। আর তাতে ভাঙে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৩১ বলে ২২ রান করেন তামিম। ওয়ানডাউনে নেমে সাকিব আল হাসান আরেক ওপেনার সৌম্যকে নিয়ে দেখে-শুনে খেলার চেষ্টা করলেও দলীয় ৭৪ রানের মাথায় বাঙে েএই জুটিও। ব্যক্তিগত ৩৩ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বিরাট কোহলির তালুবন্দী হয়ে ফেরেন সৌম্য সকার। তার আউটের পর চারে ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহিম। দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বায়লাদেশ। সাকিব-মুশফিক সে চা কাটিয়ে উঠার চেষ্টাও করে যান। একটা সময় মনে হচ্ছিলো সাকিব-মুশফিকের সেই জুটি-টা আবার জমে উঠল। প্রথম দিকে একটু ধীরে রান তুললেও পরে রানরে চাকাও বাড়াতে থাকেন দুজনে। কিন্তু ১২১ রানের মাথায় যুজবেন্দ্র চাহালের বলে শামির হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৪ রান করে ফিরে যান মুশফিক। এই জুটি থেকে আসে ৪৭ রান। গুরুত্বপূর্ন উইকেটটি হারিয়ে আরো চাপে টাইগাররা। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে সাকিব তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৬তম হাফসেঞ্চুরি। মুশফিকের পর মাঠে আসেন লিটন দাস। তাকে নিয়ে সাকিব আল হাসান নতুন করে শুরু করতে চাইলেও বেশী দূর যেতে পারেনি এই জুটিও। ২২ রানে লিটনকে ফিরিয়ে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন পান্ডিয়া। ছয়ে ব্যাট করতে আসা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত জাসপ্রিত বুমরাহর বল থার্ড পয়েন্ট দিয়ে কার্ট করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্পে আঘাতত হানে। ৩ রান করে দলীয় ১৭৩ রানের মাথায় আউট হন মোসাদ্দেক। তখন দলের একমাত্র ভরসা হয়ে রইলেন সাকিবই। কিন্তু ১৭৯ রানের মাথায় পান্ডিয়ার স্লো ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে দিনেশ কার্তিকের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন সাকিব। একাই লড়ে যাওয়ার আগে ৭৪ বলে ৬ চারে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি । তখন দলের প্রয়োজন ১৬.১ ওভারে ১৩২ রান। রান চেজ করার মতো পর্যপ্ত পরিমাণ বল হাতে থাকলেও উইকেট ছিলো অপর্যাপ্ত। এমন অবস্থায়ও সপ্তম উইকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও সাব্বির রহমান খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো এক জুটি গড়েন। দ্রত রান তুলে ৪৬ বলে ৫০ রান তোলেন পার্টনারশিপে। দলের যখন ৪২ বলে ৭০ রান প্রয়োজন জয়ের জন্য, তখনই বোল্ড হয়ে যান সাব্বির! ৩৬ বলে ৫ চারে ৩৬ রান করে বুমরাহর শিকার হন তিনি। অধিনায়ক মাশরাফি নেমেও ৫ বলে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৮ রান করে হার-জিত না ভেবে শর্ট খলতে গিয়ে ভুবেনশ্বর কুমারের বলে ধোনির তালুবন্দিতে ফেরেন। তখনই খেলা অনেকটা শেষ হয়ে যায় টাইগারদের। ৪৮তম ওভারে রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে পর পর বোল্ড করে টাইগারদের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৩৮ বলে ৯ চারে ৫১ রান করেন সাইফউদ্দিন। তার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকের সুবাধে ৪৮ ওভার সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। আর তাতে ২৮ রানের জয়ে ভারত মেতে ওঠে জয়ের আনন্দে। এই হারে শেষ হয়ে যায় টাইগারদের সেমিফাইনালের স্বপ্নও।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে জাসপ্রিত বুমরাহ ৪টি, হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি, মোহাম্মদ শামি, ভুবেনশ্বর কুমার ও যুজবেন্দ্র চাহাল একটি করে উইকেট শিকার করেন।
১০৪ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা হন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শার্মা।
Leave a Reply